Breaking news

ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন সংস্কারপন্থী স্বপন-বকুল
ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন সংস্কারপন্থী স্বপন-বকুল

ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন সংস্কারপন্থী স্বপন-বকুল

দীর্ঘ ১০ বছর পর বিএনপির সংস্কারবাদী হিসেবে পরিচিত দুই নেতা বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করে গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেছেন, দলের ঐক্যের জন্য এ বৈঠক। দলের সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিত দুই নেতা সর্দার সাখাওয়াত হোসেন বকুল ও জহির উদ্দিন স্বপন বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করার পর গত ২৪ ঘন্টায় নেতাকর্মীদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন। 

বৃহস্পতিবার রাত ১২ টায় গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এই দুই নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন খালেদা জিয়া। তাৎক্ষনিকভাবে বৈঠকের বিষয়টি না জানা গেলেও শুক্রবার বিকেলে চেয়ারপারসনের প্রেস উইং সূত্র এ বৈঠকের কথা জানায়। 

শুক্রবার রাত সোয়া ৮টার দিকে জহির উদ্দিন স্বপন ও সর্দার সাখাওয়াত হোসেন বকুলের সঙ্গে কথা হয়। নেতাকর্মীদের কাছ থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন জানতে চাইলে স্বপন বলেন, সকাল থেকেই প্রচুর লোকের সমাগম। সবাই খুব আন্তরিক। ম্যাডামও বলেছেন এখন বিভেদের সময় না, ঐকের সময়। এলাকা থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এলাকা থেকে সবচেয়ে বেশি স্বতস্ফূর্ত সাড়া পাওয়া গেছে। আজকে বহু জায়গায় মিলাদ হয়েছে, মিষ্টি খাওয়ানো হয়েছে। সপ্তাহব্যাপী উৎসব হবে।’

মূল ধারায় ফিরতে দেরি হলো কেন এ প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা তো আর আমি বলতে পারবো না। স্বাভাবিকভাবেই নানা কারণে সময় লেগেছে। বিলম্ব হলেও কাজ হয়েছে এটাই ভাল। এলাকায় যাবেন কি না জানতে চাইলে বলেন, এই মুহুর্তে এলাকায় যাওয়ার কোন পরিকল্পনা নাই। আমি তো ঢাকায় জাতীয় রাজনীতি করি। এলাকা এই মুহূর্তে আমার কাছে এতো গুরুত্বপূর্ণ না। 

দলে ফেরায় কেউ বিরোধিতা করবে বলে মনে করেন কি? এই প্রশ্নে তিনি জানান, এখন পর্যন্ত আমি তেমন সম্ভাবনা দেখি না। ম্যাডাম কত বড় নেত্রী।  তিনি ডেকেছেন তারপরও বিরোধিতা করবে কে? যদি বিরোধিতা আসে কি করবেন জানতে চাইলে বলেন, বিরোধিতা হজম করতে না পারা অসুস্থতার লক্ষণ। অসুস্থ মানুষরা বিরোধিতা ও সমালোচনা হজম করতে পারে না। সমালোচনা মোকাবেলার জ্ঞান রাখে না, বুদ্ধি রাখে না। এরা এক ধরনের প্রাণী। আমি দীর্ঘদিন রাজনীতি করা লোক। কোন অসুবিধা হবে না। 

দলে ফেরার পর কেমন সাড়া পাচ্ছেন জানতে চাইলে সাখাওয়াত হোসেন বকুল বলেন, ‘হান্ড্রেড পার্সেন্ট।বিশেষ করে আমার এলাকার জনগণ আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে গেছেন। ম্যাডামের কথা বলার ভঙ্গি ধ্যান-ধারণা চিন্তা যতটুকু দেখেছি ঐক্যের বিষয়ে অনেক গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি।
দলে ফেরায় এতো বিলম্ব কেন এ বিষয়ে তিনি বলেন, এটা হয়। এত বড় দলে কত কিছু থাকে।  অন্য সংস্কারপন্থীদের বিষয়ে তিনি বলেন, আমিও বলেছি স্বপনও বলেছে সংস্কারপন্থী অন্য যারা আছেন সবাইকে দলে নেয়ার জন্য। তখন ম্যাডাম ও মহাসচিব বলেছেন, সবাইকে নিয়ে আমরা বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলবো। এখন আর কোন বিভেদ রাখা যাবে না। চেয়ারপারসন সবাইকে পর্যায়ক্রমে ডাকবেন। 

তিনি বলেন, দলের চেয়ারপারসন মহাসচিবসহ সবাই চায় দলে ঐক্য হোক। এখানে অনেকে দ্বিমত পোষণ করতে পারে তবে দলে একেবারেই নেবে না এমন চিন্তাধারা কারও নেই। হয়তো আমাদের চাপে রাখার জন্য কেউ এমন করতে পারে। দুই নেতার দলের ফেরা প্রসঙ্গে বিএনপির ভাইস চেয়ারমান শাজাহান ওমর বীর উত্তম বলেন, যদি ভুল স্বীকার করে আসে তাহলে মাফ করতে সমস্যা কোথায়। 

২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা নেয়ার পর আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে ভাঙন ধরেছিল। দলের একাংশ সংস্কার প্রস্তাব তুলে শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগ থেকে এবং খালেদা জিয়াকে বিএনপি থেকে বাদ দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন। দুই নেত্রী সে সময় কারাবন্দী ছিলেন। রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর দুই নেত্রীই সংস্কারপন্থী নেতাদের অনেককেই আর দলে জায়গা দেননি। ২০০৭ সালের জুনে বিএনপির মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়া একটি সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে দলের যেসব নেতা সক্রিয় ছিলেন তাঁরা পরিচিতি পেয়েছিলেন সংস্কারপন্থী হিসেবে। সে সময় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মান্নান ভূঁইয়াসহ কয়েকজনকে দল থেকে বহিষ্কার করেছিলেন। পরবর্তীতে সংস্কারপন্থীরা দলের অপর অংশের আক্রমণের মুখেও পড়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত সংস্কার প্রস্তাব সফল হয়নি। এর সঙ্গে যুক্ত অনেককে বহিষ্কার করা না হলেও তারা দলে আর জায়গা পাননি। তবে সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিত বেশ কয়েকজন নেতাকে এর আগেই দলে টেনেছে বিএনপি। তারপরও এখনও অনেক নেতা সক্রিয় হতে চাইলেও দলে জায়গা পাচ্ছেন না।

বিএনপির সূত্র জানায়, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এখন চান দলের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করতে। সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিত যেসব নেতা দলে জায়গা না পেয়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে আছেন তাঁদের সক্রিয় করতে। এর অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার ওই দুই নেতাকে খালেদা জিয়া ডেকে পাঠান। পর্যায়ক্রমে এ রকম আরও কয়েকজনকে তিনি ডেকে পাঠাবেন।

১/১১ সময় জহির উদ্দিন বিএনপির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ছিলেন। ২০০৯ সালের কাউন্সিলে তিনি আর দলে জায়গা পাননি। তখন থেকে তিনি দলের বাইরে আছেন। ২০০৯ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন না পেয়ে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। সে সময় খালেদা জিয়া তাঁকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে বলেছিলেন।


Published: 2021-05-31 03:24:09   |   View: 1414   |  
Copyright © 2017 , Design & Developed By maa-it.com



up-arrow