Breaking news

৫ দিনের রিমান্ডে : বাবুল আক্তার
৫ দিনের রিমান্ডে : বাবুল আক্তার

৫ দিনের রিমান্ডে : বাবুল আক্তার

স্ত্রী মাহমুদা খানম (মিতু) হত্যা মামলার প্রধান আসামি চট্টগ্রামের সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারকে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

বুধবার (১২ এপ্রিল) দুপুর আড়াইটার দিকে তাকে আদালতে এনে ৭ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। পরে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার জাহান এ আদেশ দেন। 

 

এর আগে বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে পাঁচলাইশ থানায় হত্যা মামলা হয়। মামলায় আসামি করা হয়েছে আরও ৭ জনকে। মামলা দায়ের করেছেন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন।

বাবুল আক্তারের আইনজীবী আরিফুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে দুপুর পৌনে একটার দিকে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় মামলা দায়ের করেন মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, মামলায় বাবুল আক্তারসহ ৮ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- কামরুল ইসলাম মুছা, কালু, ওয়াসিম, শাহজাহান, আনোয়ার, এহতেসামুল হক ভোলা ও সাকি।

পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাশেম ভূইয়া মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এদিকে, মিতু হত্যার ঘটনায় বাবুল আক্তারের দায়ের করা মামলার চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেছে চট্টগ্রাম পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। 

 

এর আগে মঙ্গলবার রাতে পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, মঙ্গলবার মিতু হত্যা মামলার বাদী বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পিবিআইতে ডাকা হয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদে পিবিআই স্ত্রী হত্যায় বাবুলের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে তদন্তকারী দল। তাই তাকে পিবিআই হেফাজতে রাখা হয়েছে। মামলার তদন্তের বিষয়ে তার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। 

২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদা খানম মিতু। ওই সময় এ ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়। ঘটনার সময় মিতুর স্বামী পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার অবস্থান করছিলেন ঢাকায়। ঘটনার পর চট্টগ্রামে ফিরে তৎকালীন পুলিশ সুপার ও মিতুর স্বামী বাবুল আক্তার পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। 

জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমের জন্য স্ত্রীকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে মামলায় অভিযোগ করেন তিনি। তবে দিন যত গড়িয়েছে মামলার গতিপথও পাল্টেছে। এক পর্যায়ে সন্দেহের কেন্দ্রবিন্দুতে আসে স্বামী বাবুল আক্তারের নাম।

পাঁচ বছর আগে চট্টগ্রামে বহুল আলোচিত মাহমুদা খানম মিতু হত্যাকাণ্ডে তাঁর স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারকে ‘আটক’ করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তিনি এই হত্যা মামলার বাদী। মিতু হত্যাকাণ্ডের তদন্তে নাটকীয় মোড় নেয়ার পর বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে নতুন মামলা দায়ের করা হয়েছে।

আজ বুধবার (১২ মে) নতুন মামলাটি দায়ের করেছেন বাবুল আক্তারের সাবেক শ্বশুর মোশাররফ হোসেন এবং এরপর ওই মামলায়ই সাবেক এই পুলিশ সুপারকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

পিআইবির প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বুধবার একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ''তদন্তে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা আছে বলেই তার বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। আমরা সেরকমই সন্দেহ করছি।"

চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় মামলার পর বাবুল আক্তারকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করবে পিবিআই।

যে কারনে বাবুল আক্তারের দিকে সন্দেহের তীর?

পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বলছেন, মামলার তদন্তে বাবুল আক্তারের আচরণ এবং অনেক প্রশ্নের জবাব দিতে না পারায় তাদের সন্দেহ তৈরি হয়।

বাবুল আক্তারের ওপর সন্দেহের কারণ হিসাবে পিবিআই প্রধান বলেন, "কামরুল শিকদার মুসাকে বাবুল আক্তার চিনতেন। হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ফুটেজে তাকে পরিষ্কারভাবে দেখা গেছে। কিন্তু তাকে তিনি শনাক্ত করেননি কেন? কেন তিনি আরেকজনের দিকে (জঙ্গিদের দায়ী করে) দায় দিলেন?''

''এটা দেখার পর তার দিকে আমাদের সন্দেহ তীব্র হয়। কারণ মুসাকে তিনি খুব ভালো ভাবে চিনতেন, তার সঙ্গে যোগাযোগও ছিল। তাহলে তিনি অস্বীকার করলেন কেন?''

তিনি জানান, বাবুল আক্তারকে চট্টগ্রাম অফিসে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর তিনি অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি।

এই ঘটনায় বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা জানিয়ে তার দুইজন ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি সাক্ষ্যও দিয়েছেন বলে পুলিশ জানাচ্ছে। তাদের একজন বাবুল আক্তারের একজন বন্ধু। তারা এই ঘটনায় ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছেন।

''তারা ওই ঘটনার বিষয়ে জানেন, কীভাবে টাকা পয়সার লেনদেন হয়েছে, কোথা থেকে টাকা এসেছে। তারা তখন জানতেন না যে, এই টাকা মার্ডারে ব্যবহার করা হবে। তবে পরবর্তীতে তারা জেনেছেন,'' বলছেন বনজ কুমার মজুমদার।

কী কারণে মিতু আক্তারকে হত্যা করা হয়েছে, সেই বিষয়ে তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ''এখনও আসামী হিসাবে বাবুল আক্তারকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি। যখন তাকে আসামী হিসাবে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে, তখন এই বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে। ''

মামলার আসামি এখন বাবুল আক্তার

বনজ কুমার মজুমদার জানিয়েছেন, বাবুল আক্তার এখনও এই মামলার বাদী, মামলার ডকেটে কোথাও তিনি নেই। আইন অনুযায়ী, তাকে আসামি করার সুযোগ নেই। তাই পিবিআই এই মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন বুধবার চট্টগ্রামের আদালতে জমা দিচ্ছে। আদালত সেটা গ্রহণ করলে বাবুল আক্তারের দায়ের করা মামলার কার্যক্রম শেষ হয়ে যাবে।

স্ত্রীর হত্যাকাণ্ডের পর সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা নিজে বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছিলেন।

বাবুল আক্তারের মামলার কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর ভিকটিম মাহমুদা খাতুন মিতুর বাবা বাদী হয়ে চট্টগ্রামে নতুন মামলা দায়ের করছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। সেই মামলায় এক নম্বর আসামী করা হচ্ছে বাবুল আক্তারকে। এই মামলায় বাবুল আক্তারকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করবে পিবিআই।

পিবিআই প্রধান জানান, বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততার বিষয়টি পিবিআইয়ের কাছে পরিষ্কার হয়ে যাওয়ার পর পুলিশ মহাপরিদর্শক এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। তাদেরকে বলা হয়েছে যে পিবিআইয়ের আর তো ব্যাক করার সুযোগ নেই। তখন তারা বলেছেন, তদন্ত যা আসবে, তাই হবে। এরপর তারা বাবুল আক্তারকে গ্রেপ্তার দেখানোর সিদ্ধান্ত নেন।

বাবুল আক্তারকে সোমবার ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে নেয়া হয়।

ঘটেছিল যা 

চট্টগ্রাম নগরীতে ২০১৬ সালের ৫ই জুন সকালে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় মাহমুদা খাতুন মিতুকে কুপিয়ে ও গুলি করে খুন করা হয়। তিনি একজন পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী হওয়ায় সে সময় এই ঘটনা ব্যাপক আলোড়ন তৈরি করে।

বাবুল আক্তার এর আগে চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। হত্যাকাণ্ডের কয়েকদিন আগে একটি পদোন্নতি পেয়ে তিনি ঢাকায় গিয়েছিলেন।

ঘটনার পর মামলা করেছিলেন সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা নিজেই। বাবুল আক্তার অভিযোগ করেছিলেন যে জঙ্গিরা তার স্ত্রীকে হত্যা করেছে, কারণ তিনি জঙ্গিবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন।

হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে বাবুল আক্তারকে এর আগেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে এবং ঘটনার মাস তিনেক পর তাকে পুলিশ বিভাগের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।

২০২০ সালে এ মামলার তদন্ত গোয়েন্দা বিভাগ থেকে পিবিআই-এর হাতে দেয়া হয়।

হত্যাকাণ্ডটি নিয়ে শুরু থেকেই ছিল এক ধরনের রহস্য 

মাহমুদা খাতুন মিতুর বাবা বেশ কিছুদিন যাবত মেয়ের হত্যাকাণ্ডের জন্য জামাতা বাবুল আক্তারই দায়ী বলে দাবি করে আসছিলেন। সেই সময় একজন এসপিকে স্ত্রী হত্যা সম্পর্কিত বিষয়ে 'জিজ্ঞাসাবাদ' করা হলেও দীর্ঘ সময় ধরে পুলিশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলা হয়নি।

শেষ পর্যন্ত এ বিষয়ে মুখ খোলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, যিনি প্রশ্নের জবাবে সাংবাদিকদের জানান যে সন্দেহভাজনদের মুখোমুখি করতে তাকে গোয়েন্দা দপ্তরে নেয়া হয়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে কিছু সংবাদমাধ্যম স্ত্রী হত্যার সঙ্গে স্বয়ং বাবুল আক্তারকে জড়িয়ে খবর প্রকাশ করে।

চট্টগ্রামের পুলিশ বলছে, মিতু হত্যায় সাত-আট জন অংশ নিয়েছিল।

পুলিশের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা মনে করেন, তদন্তকারীদের এখন খুঁজে বের করতে হবে ঘটনার পেছনে কে রয়েছে, কারণ সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো - কারা এদের ভাড়া করেছিল।

আর যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, জবানবন্দীতে তারা কাদের নাম বলেছে, আর যাদের এখনও গ্রেপ্তার করা যায়নি, গ্রেপ্তার হলে তারা কাদের নাম বলবে - ওই কর্মকর্তা মনে করছেন যে এ সবই হবে এই হত্যা রহস্য উন্মোচনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।


Published: 2021-06-25 16:28:32   |   View: 1258   |  
Copyright © 2017 , Design & Developed By maa-it.com



up-arrow