Breaking news

কঠোর হচ্ছে সরকার, মাইক ব্যবহারে
কঠোর হচ্ছে সরকার, মাইক ব্যবহারে

কঠোর হচ্ছে সরকার, মাইক ব্যবহারে

লাউডস্পিকার ও সাউন্ড সিস্টেমসহ যত্রতত্র মাইক ব্যবহারে কঠোর হচ্ছে সরকার। ইতোমধ্যেই স্থানীয় প্রশাসনকে এ বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মাঠ প্রশাসন এ নিয়ে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে চিঠিও দিয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ৬ষ্ঠ সভার সুপারিশের ভিত্তিতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, মাইক বা লাউডস্পিকার ব্যবহারে অরাজকতা চলছে দেশজুড়ে। অনেক সময় দেখা গেছে, রাতের পর রাত বাজানো হচ্ছে মাইক। এতে ওই এলাকার বাসিন্দাদের ঘুমের ব্যাঘাতসহ শিক্ষার্থীদের পড়াশোনারও ক্ষতি হচ্ছে। মানুষের কানের বিভিন্ন রোগ এমনকি মস্তিষ্কেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বিশেষ করে হৃদরোগী ও মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের ঘটনাও ঘটে উচ্চশব্দের কারণে। এসব নিয়ে এলাকার জনপ্রতিনিধিদের সোচ্চার থাকার কথা থাকলেও দেখা যায়, তাদের কর্মকাণ্ডই মাইকে প্রচার করা হচ্ছে নিয়মবহির্ভূতভাবে।
এক্ষেত্রে অনেকেই বিদ্যমান শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০০৬ আমলে নিচ্ছে না। অনেক সময় স্থানীয় প্রশাসন বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্যোগে নিজ নিজ এলাকায় গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে শব্দদূষণ রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও করোনা মহামারির কারণে এ বছর কেন্দ্রীয়ভাবে সারাদেশে উদ্যোগ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।


খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সারা বছরই দেশজুড়ে দিনে-রাতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সভা সমাবেশ, বিয়েসহ মৌসুমি অনুষ্ঠান লেগেই আছে। আর শীতকালে বিভিন্ন ধর্মীয় সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক আয়োজনও বাড়ে। যথারীতি এসব অনুষ্ঠানে গভীর রাত পর্যন্ত উচ্চশব্দ তৈরি করতে থাকে একাধিক মাইক।
আগে এ নিয়ে প্রশাসন নীরব থাকলেও বর্তমানে তা সহনীয় মাত্রা অতিক্রম করেছে বলে জানানো হয়। আর এ কারণেই মাইক ব্যবহারের ক্ষেত্রে আইন মেনে চলার ওপর জোর দেওয়ার কথা ভাবছে সরকার।
জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ৬ষ্ঠ সভার সুপারিশ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যেই সংসদীয় কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য দেশের সকল বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের চিঠি লিখেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সভা সমাবেশ, সামাজিক অনুষ্ঠান এমনকি ওয়াজ মাহফিলের লাউডস্পিকারও জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছে। এ দুর্ভোগ লাঘবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সকল বিভাগীয় কমিশনারদের বলা হয়েছে।


ধর্ম মন্ত্রণালয়ের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে মাঠ পর্যায়ে ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে বিভাগীয় কমিশনারের দফতর। সকল বিভাগীয় কমিশনারের দফতর থেকে অধীনস্থ সকল জেলা প্রশাসন বরাবরেও ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে। বিভাগীয় কমিশনারদের বরাত দিয়ে জেলা প্রশাসকের দফতর থেকে জেলা পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম জানান, সংসদীয় কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য বলেছি। তবে মাঠ প্রশাসন বিশেষ করে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকরা নিজ নিজ এলাকার বাস্তবতার নিরিখে যে পদক্ষেপ নেবেন সেটাই চূড়ান্ত। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে সুনির্দিষ্ট কোনও উদ্যোগের কথা বলা হয়নি।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে খুলনার বিভাগীয় কমিশনার ড. মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন হাওলাদার জানিয়েছেন, করোনা মহামারির সংক্রমণ ঠেকাতে শুধু ওয়াজ মাহফিলই নয়, সভাসমাবেশ, সামাজিক আচার অনুষ্ঠানসহ সব ধরনের ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানের জনসমাগম নিয়ন্ত্রণ করতে হচ্ছে। জনসমাগম না হলে তো আর মাইক লাগবে না। ইতোমধ্যেই আমরা হিন্দু সম্প্রদায়ের রাসস্নানের ব্যবস্থা রেখে রাসমেলা বন্ধ করেছি। সেখানে অন্য ধর্মের মানুষের আগমনও নিষিদ্ধ করেছি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, আবাসিক এলাকায় শব্দের মাত্রা দিনের বেলা হওয়া উচিত ৫৫ ডেসিবল ও রাতে ৪৫ ডেসিবল। বাণিজ্যিক এলাকার ক্ষেত্রে এই সীমা দিনে ৬৫ ডেসিবল ও রাতে ৫৫ ডেসিবল বলা হয়েছে। আবার শিল্পাঞ্চলে দিনে ৭৫ ডেসিবল ও রাতে ৬৫ ডেসিবল পর্যন্ত শব্দ থাকা উচিত। অন্যদিকে হাসপাতাল আছে এমন এলাকায় দিনে সর্বোচ্চ ৫০ ডেসিবল ও রাতে ৪০ ডেসিবল গ্রহণযোগ্য মাত্রা রাখা হয়েছে।


উল্লেখ্য, আমাদের স্বাভাবিক কথাবার্তার মাত্রা হলো ৬০ ডেসিবল, গাড়ি চলাচলের শব্দ ৮৫ ডেসিবল, মোটরসাইকেলের শব্দ ৯৫ ডেসিবল, সাইরেন বা উড়োজাহাজ যাওয়ার শব্দ ১২০ ডেসিবল।
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫-এর ক্ষমতাবলে শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০০৬ এর আওতায় নীরব, আবাসিক, মিশ্র, বাণিজ্যিক ও শিল্প এলাকা চিহ্নিত করে শব্দের মাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। আইন অমান্য করলে প্রথমবার অপরাধের জন্য এক মাস কারাদণ্ড বা অনধিক পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড এবং পরবর্তী অপরাধের জন্য ছয় মাস কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।


Published: 2021-06-28 19:57:36   |   View: 1351   |  
Copyright © 2017 , Design & Developed By maa-it.com



up-arrow