Breaking news

নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে মাঠে বিএনপি
নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে মাঠে বিএনপি

নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে মাঠে বিএনপি

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এখন সারা দেশে নতুন করে রাজনৈতিক তৎপরতা শুরু করেছে। আগামী নির্বাচন যাতে অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হয় সে লক্ষ্যে দলটির অভ্যন্তরে কৌশলগত বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে।

সংগঠন পুনর্গঠন করতে ইতোমধ্যে ৫১টি দল গঠন করেছে কেন্দ্রীয় বিএনপি। এসব দল সারাদেশে কর্মীসভা এবং দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম আরও জোরদার করতে নির্দেশনা দেবে। জাতীয় রাজনীতি, আগামী নির্বাচন ও সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন নেতারা। একই সঙ্গে ৩০০টি নির্বাচিত আসনে মনোনয়ন নিশ্চিত করতে তৎপর হবে দলটি।

আগামী নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির রাজনৈতিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ প্রথম পর্ব।

২৪ এপ্রিল সারা দেশে ৭৭টি সাংগঠনিক জেলায় কর্মীসভা করার জন্য বিএনপি ৫১টি দল গঠন করে। দলের প্রধানরা হলেন- বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর- ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ এবং মানিকগঞ্জ; স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন- চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ এবং মহানগর; মির্জা আব্বাস- বরিশাল উত্তর ও দক্ষিণ এবং মহানগর; গয়েশ্বর চন্দ্র রায়- রাজশাহী জেলা ও মহানগর; আবদুল মঈন খান- নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর; নজরুল ইসলাম খান- রংপুর ও মহানগর; আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী- সিলেট ও মহানগর।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যানদের মধ্যে আবদুল্লাহ আল নোমান- ময়মনসিংহ উত্তর ও দক্ষিণ; অধ্যাপক এম এ মান্নান নারায়ণগঞ্জ ও মহানগর; হাফিজ উদ্দিন আহমেদ- নীলফামারী ও লালমনিরহাট; চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ- রাজবাড়ী ও গোপালগঞ্জ; আলতাফ হোসেন চৌধুরী- ঝালকাঠি; সেলিমা রহমান- নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ; মোহাম্মদ শাহজাহান- মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ; মীর মো. নাসিরউদ্দিন- চাঁদপুর ও কক্সবাজার; খন্দকার মাহবুব হোসেন- ঢাকা; রুহুল আলম চৌধুরী- কুড়িগ্রাম; ইনাম আহমেদ চৌধুরী- শেরপুর; আমিনুল হক চাঁপাইনবাবগঞ্জ; আবদুল আউয়াল মিন্টু- কুমিল্লা উত্তর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া; এ জেড এম জাহিদ হোসেন- সিরাজগঞ্জ ও পাবনা; শামসুজ্জামান দুদু- কুমিল্লা দক্ষিণ ও বান্দরবান; আহমেদ আজম খান- জামালপুর ও শরীয়তপুর; জয়নাল আবেদীন- গাজীপুর; নিতাই রায় চৌধুরী- বরগুনা; শওকত মাহমুদকে রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলায় কর্মীসভা করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমানউল্লাহ আমান- টাঙ্গাইল; মিজানুর রহমান মিনু-পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও; আবুল খায়ের ভুঁইয়া- মাগুরা; অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন ঝিনাইদহ; মনিরুল হক চৌধুরী- মেহেরপুর; ফজলুর রহমান- নরসিংদী; হাবিবুর রহমান হাবিব- পটুয়াখালী; আতাউর রহমান ঢালী- ফেনী; দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী- খুলনা ও মহানগর; যুগ্ম মহাসচিব মাহবুবউদ্দিন খোকন- মাদারীপুর; মজিবুর রহমান সারোয়ার- ভোলা; সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল- যশোর; খায়রুল কবির খোকন- নাটোর; হাবিব-উন-নবী খান সোহেল- বগুড়া ও গাইবান্ধা; হারুন অর রশীদ- নওগাঁ; সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন- মুন্সিগঞ্জ; রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু- বাগেরহাট ও চুয়াডাঙ্গা; নজরুল ইসলাম মঞ্জু- নড়াইল; আসাদুল হাবিব দুলু- দিনাজপুর ও সৈয়দপুর; সাখাওয়াত হোসেন জীবন- সুনামগঞ্জ; বিশেষ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন- পিরোজপুর; প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী- সাতক্ষীরা ও ঝিনাইদহ; মশিউর রহমানকে কুষ্টিয়া জেলায় কর্মিসভা করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা জানান, আগামী নির্বাচন উপলক্ষে চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া শিগগিরই নির্বাচনকালীন সময়ে ‘সহায়ক সরকার’ নামে একটি রূপরেখার প্রস্তাব তুলে ধরবেন। এ প্রস্তাব যদি সরকার গ্রহণ না করে তাহলে সারাদেশে প্রস্তাবের পক্ষে জনমত গড়ে তোলা হবে। একই সঙ্গে কোন পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে সে বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি সরকারবিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য তৃণমূল নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা রাখতে নতুন করে উদ্যোগ নেয়া হবে।

তারা জানান, এ কৌশল সামনে রেখেই দল গোছানো, সাংগঠনিকভাবে দলকে শক্তিশালী করা এবং এলাকায় দলের অবস্থান কতটুকু শক্তিশালী তা নিয়ে আলোচনা করতেই ৫১টি দল গঠন করা হয়েছে। এসব দলের নেতারা আগামী ৭ মে পর্যন্ত জেলায় জেলায় কর্মিসভার পর একটি প্রতিবেদন তৈরি করবেন। ওই প্রতিবেদন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছে তুলে দেবেন। এরপর তিনি (খালেদা জিয়া) দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ সিনিয়র নেতা এবং ২০ দলীয় জোটের নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করে ভবিষ্যৎকরণীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

বিএনপির শীর্ষপর্যায়ের কয়েকজন নেতা জানান, সাংগঠনিক সফরের মধ্য দিয়ে এলাকায় জনপ্রিয়, গ্রহণযোগ্য ও ত্যাগী নেতাদের তালিকাও তৈরি করা হবে। পরবর্তীতে ওই নেতাদের মধ্য থেকে সংসদীয় আসনের জন্য একজনকে মনোনীত করবেন দলের চেয়ারপারসন।

এ বিষয়ে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমাদের (বিএনপি) জাতীয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দলের সাংগঠনিক পুনর্গঠনের জন্য ৫১টি দল গঠন করা হয়েছে। এসব দল সারাদেশের ৭৭টি সাংগঠনিক জেলা সফর করবে। নেতৃত্বে থাকবেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা দলের স্থানীয় পর্যায়ের সব নেতাকর্মীর সঙ্গে মিলিত হবেন আনুষ্ঠানিকভাবে ও অনানুষ্ঠানিকভাবে। তারা দেশের চলমান সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করবেন।’

তিনি বলেন, ‘আন্দোলন ও আগামী নির্বাচনসহ সব বিষয়ে আলোচনা হবে। আশা করছি, এ সফরে আমাদের দলের সাংগঠনিক শক্তি ও ঐক্যও বৃদ্ধি পাবে। নেতাকর্মীরা ভবিষ্যৎ কার্যক্রমের জন্য আরও বেশি উজ্জীবিত হবেন। কারণ আমাদের এ কর্মসূচির মধ্যে বর্তমান রাজনীতির সব কিছুই বিদ্যমান থাকবে।’

এ ব্যাপারে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান বলেন, সাংগঠনিক টিমের নেতাদের নিয়ে ২৬ এপ্রিল মহাসচিব বৈঠক করছেন। ওই বৈঠকে সফরের তারিখ নির্ধারণ হয়েছে। ইতোমধ্যে আমাদের সাংগঠনিক তৎপরতাও শুরু হয়েছে।

তিনি বলেন, এ সফরের মূল টার্গেট আগামী জাতীয় নির্বাচন। এ ইস্যু নিয়ে সংগঠনের অবস্থা জানান দেয়া, তৃণমূলের অবস্থা জানা এবং পরবর্তীতে একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হতে সহায়ক হবে।
এদিকে বিএনপির একাধিক শীর্ষনেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার নিয়ে রাজনীতির মাঠ সরব থাকার পাশাপাশি সংসদীয় আসনগুলোতে সম্ভাব্য প্রার্থীদের খসড়া তালিকা চূড়ান্ত করার প্রতিও মনোযোগী হচ্ছেন দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

তবে এক্ষেত্রে একটু কৌশল অবলম্বন করতে চান বিএনপির শীর্ষ নেতারা। কারণ মনোনয়নের বিষয়টি আলোচনায় আসলে সহায়ক সরকারের দাবিতে সরব অবস্থান অনেকটা চাপা পড়ে যাবে। তাই নীরবেই দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত করতে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও বরিশাল বিভাগের রাজনৈতিক অভিভাবক মজিবুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, আমরা মাঠের লোক। মাঠের রাজনীতি নিয়েই আছি। সংগঠনকে শক্তিশালী করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। পরবর্তী নির্বাচনে মনোনয়নের বিষয়টি কেন্দ্র থেকেই চিন্তা-ভাবনা করবে।

তিনি আরও বলেন, ভোলায় ৫ ও ৬ মে সাংগঠনিক সফর অনুষ্ঠিত হবে। এ সফরে তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনসহ সাংগঠনিক তৎপরতা বাড়াতে উদ্যোগ নেয়া হবে। আগামী নির্বাচনে সফল হতে দলের অভ্যন্তরীণ কৌশলগত বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েও কাজ করা হবে।

পিরোজপুরের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপির বিশেষ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন কর্মিসভা প্রসঙ্গে বলেন, আমাদের অনেক নেতাকর্মী জেলে আছেন, অনেক কর্মী গুম হয়েছেন, অনেক পরিবার অসহায়ত্বের মধ্যে দিনাতিপাত করছে। ওইসব পরিবারের সঙ্গে আমরা দেখা করব, তাদের খোঁজখবর নেব।

তিনি আরও বলেন, আন্দোলন ও নির্বাচন সামনে রেখে সাংগঠনিক প্রস্তুতি নেয়াই এ সফরের মূল লক্ষ্য।

বিএনপির সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. শাখাওয়াত হোসেন জীবন বলেন, এ বিভাগের কোনো জেলায়ই এখনও কর্মিসভার তারিখ র্নিধারণ হয়নি। সিলেটের সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জে ত্রাণতৎপরতা নিয়ে এখন আমরা ব্যস্ত। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় আপাতত ত্রাণ বিতরণ প্রাধান্য দিচ্ছি। তবে দু-একদিনের মধ্যে তারিখ নির্ধারণ করা হবে।

৭ মে’র মধ্যে সব জেলায় কর্মিসভা করা সম্ভব হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা এখন বলা যাচ্ছে না।

ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, আমরা ইতোমধ্যে কিশোরগঞ্জে কর্মীসভা করেছি। চলতি সপ্তাহে নেত্রকোনা ও শেরপুরে করব।

যথাসময়ে সবকটি জেলায় কর্মীসভা সম্ভব হবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যথাসময়ে শেষ করা সম্ভব হবে না। তবে যতদূর শুনেছি সময় বাড়ানো হতে পারে। সে বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে শিগগিরই হবে।

Published: 2021-06-21 06:58:56   |   View: 1553   |  
Copyright © 2017 , Design & Developed By maa-it.com



up-arrow