শনিবার সন্ধ্যায় নয়া দিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর বেরিয়ে এসে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়টি তিনি শেখ হাসিনাকে ‘বুঝিয়ে বলেছেন’।
“আমি একটি বিকল্প প্রস্তাব ভেবে দেখতে বলেছি সবাইকে। দুই সরকারকে। এটা আমি লাঞ্চেও বলেছি।
“আমাদের কিছু ছোট ছোট নদী আছে। যেগুলো জীবনে কখনো নার্চার হয়নি। এবং যেগুলো দিয়ে বাংলাদেশে একটা কানেকশনও আছে। সেখানে যদি আমরা দুটো দেশ স্টাডি করে কোনো ভায়াবিলিটি দেখতে পাই, তাহলে কিছুটা কিছুটা আমরা শেয়ার করতে পারি।”
“মমতা বলছেন, বাংলাদেশ পানি পাক, তা তিনিও চান। কিন্তু তিস্তা থেকে দেওয়ার উপায় তার নেই।
“আমি বলেছিলাম যে আমরা যদি একটু ভেবে দেখি, তিস্তায় যখন আমার প্রব্লেম হচ্ছে, আর তিস্তাতে যেহেতু আমার কাজলডোবা ব্যারেজ আছে, আমার জলের প্রব্লেম আছে, ড্রিংকিং ওয়াটার, ফারমার্স, নানান প্রব্লেম আছে। এই হিসেবে আমি তিন-চারটি নদীর নামও বলে গেছি।”
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, তোর্সা, মানসাই, ধানসাই ও ধলোরার মত কয়েকটি ছোট নদী আছে, যেগুলো বাংলাদেশে গিয়ে মিশেছে।
যৌথ সমীক্ষা করে যদি সেসব নদী থেকে বাংলাদেশকে পানি দেওয়ার সুযোগ থাকে, তাহলে তিনি তাতে রাজি আছেন।
ছয় বছর আগে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তিতে তা আটকে যায়। এরপর বিভিন্ন সময় ভারত সরকার এই চুক্তি সইয়ের বিষয়ে আশ্বাস দিলেও সমস্যার সমাধান হয়নি।
শনিবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে চুক্তি ও সমঝোতা সই হলেও তিস্তার বিষয়ে কোনো ঘোষণা আসেনি।
এর বদলে তিস্তার জট খোলার আশ্বাস দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের জন্য তিস্তা চুক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
“আমাদের প্রতিশ্রুতি এবং অব্যাহত প্রচেষ্টা সম্পর্কে আমি আপনাকে (শেখ হাসিনা) এবং বাংলাদেশের জনগণকে আশ্বস্ত করতে চাই।
“আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, আমার ও আপনার সরকারই তিস্তার পানি বণ্টন সমস্যার সমাধানে পৌঁছতে পারবে।”
শনিবার সকালে শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের এক পর্যায়ে নরেন্দ্র মোদী পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে ডেকে নেন এবং তিস্তা প্রসঙ্গে তোলেন বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর খবর।
সন্ধ্যায় শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত আমন্ত্রণে রাষ্ট্রপতি ভবনে যান মমতা। সেখানে নৈশভোজেও তিস্তা নিয়ে তাদের কথা হয়।
রাতে মমতা সাংবাদিকদের বলেন, দুই দফার সাক্ষাতেই তিনি তিস্তার বদলে অন্য নদীর এই বিকল্প প্রস্তাব বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেছেন।
“তিস্তা নিয়ে একটু প্রব্লেম আছে ঠিকই আমাদের। কারণ তিস্তাতো আমাদের লাইফ লাইন অব দি নর্থ বেঙ্গল। তিস্তার জল সত্যিই কমে গেছে। শুষ্ক মৌসুমে তো একদমই নেই। আমি নিজেও ক'দিন আগে দেখতে গিয়েছিলাম।বাংলাদেশ যে তিস্তার পানি পাচ্ছে না, তা মমতার কথায় মোটামুটি স্পষ্ট।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “তিস্তা যদি নাও দিতে পারি, তাহলে ভাবার কিছু নাই। আমরা বাংলাদেশকে খুব ভালোবাসি, অন্তর দিয়ে ভালোবাসি। আমরা চাই, বাংলাদেশও জল পাক।”
মমতার এই প্রস্তাব নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।