মো: মোস্তাফিজুর রহমান খান : অবৈধ আতশবাজির কারখানায় বিস্ফোরণে ২ নারী শ্রমিকের বীভৎস মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত প্রধান আসামী মো: বোরহান উদ্দিন‘কে গত ২২/০৪/২০২২ইং তারিখ রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় সিআডি।
আজ শনিবার সিআইডি সদরদপ্তর মিডিয়া সেন্টার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির বিষেশ পুলিশ সুপার মুক্ত ধর এ সংক্রান্ত বিষয়ে বলেন,
গত ২০/০৪/২০২২ ইং তারিখ বুধবার ভোর আনুমানিক ০৬:৩০ ঘটিকায় ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল থানাধীন দক্ষিন বাশাঁটি চন্ডিপাশা এলাকায় একটি অনুমোদনহীন আতশবাজির কারখানায় আতশবাজি তৈরীর সময় বারুদ ও ক্যামিকেল হঠাৎ বিস্ফোরিত হয়ে কারখানার দুইজন নারী শ্রমিক (১) নাছিমা আক্তার (৩০), স্বামী আবুল মিয়া, সাং-বারইগ্রাম ও (২) আফিয়া খাতুন (৪৫), স্বামী- আব্দুল গণি, সাং-দক্ষিণ বাশহাটি, উভয় থানা- নান্দাইল, জেলা-ময়মনসিংহ তৎক্ষনাৎ মৃত্যুবরণ করে।
ভিকটিম নাসিমা আক্তার দেড় বছর এবং আফিয়া খাতুন চার মাস ধরে উক্ত কারখানায় কাজ করে আসছিলো।তারা দক্ষতা অনুযায়ী সপ্তাহে দুই থেকে ছয় হাজার টাকা আয় করতো। উক্ত বিস্ফোরনে দুই নারী শ্রমিকের বীভৎস মৃত্যুর ঘটনাটি দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে এবং বিভিন্ন প্রিন্ট, অনলাইন ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে প্রচারিত হয়।
এসময় তিনি বলেন, ঘটনাটি সংগঠিত হওয়ার সাথে সাথেই বিভিন্ন তদন্ত সংস্থার পাশাপাশি সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার, জনাব মুক্তা ধর পিপিএম (বার) এর সার্বিক তত্ত¡বধানে ও নির্দেশনায় সিআইডির এলআইসি শাখা ছায়া তদন্ত শুরু করে।
জানা যায় যে, বিস্ফোরনের স্থানে দীর্ঘদিন যাবৎ অবৈধভাবে বিস্ফোরক দ্রব্য মজুদ রেখে আতশবাজি তৈরী করা হচ্ছিলো। প্রাথমিক তদন্তে জানা যায় যে, উক্ত কারখানার মালিক মোঃ বোরহান উদ্দিন(৫০)। এ ঘটনা সংক্রান্তে মোঃ বোরহান উদ্দিনকে মুল আসামী করে ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল থানা এফআইআর নং-২৫/১০৩ তারিখঃ ২১/০৪/২০২২ ইং ধারা-৩/৪(খ)/৫/৬ ১৯০৮ সালের বিস্ফোরক দ্রব্য আইন ও এফআইআর নং-২৬/১০৪ তারিখঃ ২১/০৪/২০২২ ইং ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোড ১৮৬০ দুইটি মামলা রুজু হয়।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার বলেন, উক্ত আসামীদের গ্রেফতারের জন্য সম্ভাব্য সকল স্থানে গ্রেফতারী অভিযান পরিচালনা করে এলআইসির একাধিক চৌকস টীম । তারই ধারাবাহিকতায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া হতে উক্ত মামলা দুইটির মূল আসামী মোঃ বোরহান উদ্দিন (৫০), পিতা-মৃতঃ চাঁন মিয়াকে ইং ২২/০৪/২০২২ তারিখ রাতে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়। বোরহান উদ্দিনের নামে নান্দাইল থানার মামলা নং-১৯/৪৬০, তারিখঃ ১৩/১১/২০১৯ ইং, ধারাঃ -৩৬/(১) সারণির ১০(ক)/৪১ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ রুজু রয়েছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত উভয় মামলার প্রধান আসামী বোরহান উদ্দিন দীর্ঘ ১৫-২০ বছর যাবৎ উক্ত কারখানায় অবৈধভাবে আতশবাজি তৈরি করে আসছিলো। উক্ত কারখানায় তিনি ছোট ছোট চকলেট বাজি, তারাবাজি, পটকা ইত্যাদি তৈরি করে স্থানীয় বিভিন্ন বাজার ও পাশর্বর্তী এলাকার বিভিন্ন দোকানে সরবরাহ করে আসছিলো। আতশবাজি তৈরির জন্য কাচাঁমাল সে ঢাকার চকবাজার এলাকা থেকে ক্রয় করতো। কারখানাটিতে আতশবাজি তৈরির জন্য পালাক্রমে ৫০ জন শ্রমিক কাজ করতো। উক্ত ঘটনার দিন ভোরে আতশবাজি তৈরির সময় ২ জন নারী শ্রমিক আতশবাজির প্রচন্ড বিস্ফোরনে বীভৎসভাবে মৃত্যুবরণ করে এবং বিস্ফোরনের তীব্রতায় উক্ত কারখানার চালও দুমড়ে মুচরে যায় এবং ঘরের দেওয়াল খন্ড বিখন্ড হয়ে ভেঙ্গে পড়ে। এছাড়াও ঘরের আসবাবপত্র ধ্বংস প্রাপ্ত হয়।
এসময় পুলিশ সুপার বলেণ, এরুপ নির্মম এবং চাঞ্চল্যকর ঘটনার প্রধান আসামীকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে সনাক্ত পূর্বক গ্রেফতার সিআইডি তথা বাংলাদেশ পুলিশের একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন।